বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ
🔥বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ 🔥
👉 বায়োফ্লক ট্যাংক তৈরির পর হার্ভেস্ট পর্যন্ত সব ব্যাবস্থাপনা সংক্ষেপে লেখার চেষ্ঠা করলাম,আশা করি নতুনদের কিছুটা উপকারে আসবে, যদিও এটা আমার একান্ত নিজের অভিঙ্গতা থেকে লিখা তাই সবার সাথে নাও মিলতে পারে।
👉 বায়োফ্লকে পানির উৎস :
বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের জন্য ট্যাংক তৈরির পর প্রথম কাজ হলো পানি ব্যবস্থাপনা ও পানিতে ফ্লক তৈরী করা,পানির জন্য গভীর নলকূপ, সমূদ্র, নদী,বড় জলাশয়,লেক,বৃষ্টি ইত্যাদির উৎসের পানি ব্যবহার করা যায়, তবে গভীর নলকুপের পানি ব্যাতীত অন্য উৎসের পানি ব্যবহারের পূর্বে জীবাণুনাশক দিয়ে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে।
🔰 বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে প্রয়োজনীয় মালামাল ও মূল্য তালিকা :
☞পানির ট্যান্ক
☞ এয়ার পাম্প
☞ এয়ার স্টোন
☞ টেম্পারেচার মিটার
☞ ইমহফ কোন
☞ টিডিএস মিটার
☞ অ্যামোনিয়া টেষ্ট কিট
☞ স্যালিনিটি মিটার
☞ পিএইচ মিটার
☞ প্রোবায়োটিক
👉 বায়োফ্লকের জন্য উপযোগী পানি তৈরী করা :
প্রথমে ট্যাংক জীবাণুনাশক/ ব্লিচিং পাউডার দিয়ে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে। পানিতে আয়রনের মাত্রা ০.১- ০.২ mg/L এর বেশি হলে পানি থেকে আয়রন দূর করার জন্য ১০ হাজার লিটার ট্যাংকে ৫০০ গ্রাম ফিটকারি দিয়ে ২৪ – ৩৬ ঘন্টা এয়ারেশন দিয়ে ৪ - ৫ ঘন্টা এয়ারেশন বন্ধ রাখলে আয়রনের ময়লা ট্যাংকির নিচে জমা হয়ে যায় এবং পুরো ট্যাংকির পানি স্বচ্ছ হয়ে যায়, ফলে সাইফুনিন পাইপ দিয়ে আয়রন/ ময়লাটা বাইরে সহজেই ফেলে দেওয়া যায়,,
👉 তারপর পানিতে চুন প্রয়োগ :
ফিটকারি ব্যবহারের কারনে অবশ্য পানির পিএইচ কমে যায়, তখন আরও ১০ - ১২ ঘন্টা পানিতে অনবরত বাতাস সরবরাহ করতে হবে। ২৪ ঘন্টা পর পানিতে ৮০০ গ্রাম – ১ কেজি (১০ হাজার ট্যাংকির জন্য) চুন প্রয়োগ করে বাতাস সরবরাহ নিয়মিত করতে হবে, চুন প্রয়োগ মাত্রা পানির পিএইচ এর উপর নির্ভর করে কমতে বা বাড়তে পারে।
👉 তারপর পানিতে লবন প্রয়োগ :
এবার পানির TDS কাংখিত পর্যায়ে আনতে লবন দিতে হবে,আমাদের দেশের স্বাধু পানির মাছ গুলোর জন্য TDS ৫০০-৮০০ রাখলেই চলে, তাই ছোট অবস্থায় TDS ৫০০-৬০০ রাখার জন্য ১০ হাজার লিটার ট্যাংকিতে ৫-৬ কেজি র- লবন (আয়োডিন ছাড়া) দিলেই চলে,পরবর্তীতে প্রয়োজন হলে কিছুটা বাড়িয়ে নিতে পারবেন তখন মাছও বড় হবে এবং সহ্য করতে পারবে,বায়োফ্লকের জন্য ৫০০ - ১৮০০ ppm TDS থাকা ভাল সেটা কত মাত্রায় কোন প্রজাতির জন্য থাকবে সেটা যাচাই করে নিতে হবে।
👉 তারপর পানিতে ফ্লক তৈরি :
প্রথম ডোজে প্রোবায়োটিক (হ্যটারোটপিক ব্যাক্টেরিয়া) ৫০ বা ৬০ গ্রাম প্রতি ১০ হাজার লিটার পানির ক্যাপাসিটি ট্যাংকির জন্য সাথে চিটাগুড় ৫০০ গ্রাম নিন, তারপর ১০ হাজার লিটার ট্যাংকির জন্য ১০ লিটার পানি একটি প্লাস্টিকের বালতিতে ভালভাবে মিশিয়ে অক্সিজেন সরবরাহ করে ৮- ১০ ঘন্টা কালচার করে প্রয়োগ করতে হবে। ২য় দিন থেকে ৫০ গ্রাম চিটাগুড় প্রতি দিন পানিতে গুলিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।বায়োফ্লকে পানির পিএইচ ৭.৫- ৮.৫ এর মধ্যে থাকা বাঞ্চনীয়,,,,
👉 তারপর বায়োফ্লকের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ :
পানিতে যথাযথ পরিমাণ ফ্লক তৈরি হলে-১. পানির রং সবুজ বা বাদামি দেখায়২. পানিতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা দেখা যায়৩. পরীক্ষা করলে পানি অ্যামোনিয়া মুক্ত দেখায়৪. প্রতি লিটার পানিতে ০.৩ গ্রাম ফ্লকের ঘনত্ব পাওয়া যাবে ৫. ক্ষুদিপানা দেওয়ার পর তাদের বংশ বিস্তার পরিলক্ষিত হয়।
👉 নিয়মিত পানির গুণাগুণ পরীক্ষা :
বায়োফ্লক পদ্ধতির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান উপকারী ব্যাকটেরিয়া যা মাছচাষের ফলে উৎপাদিত বর্জ্য কে প্রোটিন সমৃদ্ধ জৈব খাবারে তৈরি করে। তাই সঠিক উৎস হতে প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া সংগ্রহ করতে হবে।নিয়মিত ট্যাংকে সরবরাহকৃত পানির গুণাগুণ যেমন- অ্যামোনিয়া, নাইট্রেট, নাইট্রাইট, ফ্লকের ঘনত্ব ইত্যাদি পরিমাপ করতে হবে এবং এগুলো যদি সঠিক মাত্রায় না থাকে তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
👉 মাছ ছাড়ার পুর্বে অক্সিজেন, পিএই, অ্যামোনিয়া, TDS , তাপমাত্রা পরীক্ষা করে নিতে হবে :
বায়োফ্লকের জন্য তাপমাত্রা একটা বড় ফ্যাক্টর। তাপমাত্রা ২০ এর নিচে নেমে গেলে বায়োফ্লক তৈরী হবে না। স্ট্যান্ডার্ড তাপমাত্রা হল ৩০ ডিগ্রী। তাই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
👉 অ্যামোনিয়া ০.৬-২.০ মিলিগ্রাম/লিটার হলে মাছের জন্য তা বিষাক্ত হয়ে থাকে। অ্যামোনিয়া ঘনত্বের সর্বোচ্চ মাত্রা হলো ০.১মিলিগ্রাম/লিটার। অ্যামোনিয়ার পরিমাণ ০.২ মিলিগ্রাম/লিটার এর কম থাকা ভালো। যদিও ০.৪ মিলিগ্রাম/লিটার গ্রহণযোগ্য।
মাছ চাষের পানিতে #পিএইচ এর মাত্রা ৭-৮.৫ এর মধ্যে থাকা বাঞ্চনীয়। পিএইচ মাত্রা যদি ৪.৫ এর নিচে হয় এবং ১০ এর উপরে হয় তবে সব মাছ মারা পড়বে। পিএইচ যদি ৬.৫-৮.৫ এর নিচে বা উপরে হয় তবে এক্ষেত্রে মাছ যেকোনভাবে আক্রান্ত হবে।
এছাড়া TDS 600-1200 মধ্যে রাখা ভালো
👉 সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে এবার মাছ চাষ শুরু:
আমাদের দেশে দশ হাজার লিটার একটা বায়োফ্লকে 450/500 কেজি উৎপাদন পাওয়া যাচ্ছে,আর আপনি কোন মাছ চাষ করবেন,আর কয়টায় কেজি করবেন তার উপর ভিত্তি করে পোনা ছাড়তে পারেন,আর পোনা গুলো যদি 1000 লাইনের হয় তবে সব চেয়ে ভালো হয়,
🔰 এছাড়া অন্যান্য মাছের পরিমানটা এরকম হবে দশ হাজার লিটারের জন্য :
✔ তেলাপিয়া - 2500/3000
✔ কই মাছ - 5000/5500
✔ দেশি মাগুর - 5000/5500
✔ দেশি শিং - 6000/6500
✔ পাবদা - 6000/6500
নোট - বায়োফ্লক পদ্ধতিতে ট্যাংকে অধিক পরিমাণে মাছ রাখা হয়। তাই ট্যাংকে সব সময় অক্সিজেন সরবরাহ করতে হয়, ট্যাংকে সব সময় অক্সিজেন সরবরাহ করার জন্য সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ লাগবে। তা না হলে ট্যাংকের অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে সব মাছ এক সাথে মারা যেতে পারে। সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা ট্যাংকে অক্সিজেন সরবরাহ না করা হলে সব মাছ মারা যেতে পারে।
👉 মনে রাখতে হবে :
ফ্লক তৈরি ও ফ্লক এর কার্যকারীতা ধরে রাখাই হল বায়োফ্লক এর মুলবিষয়।সাধারণত পানিতে প্রবায়োটিক কার্যকর হলে রোগাক্রান্ত হবার কোন প্রশ্নই আসে না। এরপর যদি রোগাক্রান্ত দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে আপনার ফ্লক অপটিমাম লেভেলে নেই কিংবা ফ্লক কার্যকর হচ্ছে না।এজন্য পানি গন্ধ হচ্ছে, মাছ মারা যাচ্ছে ইত্যাদি।
👉 মাছ মারা যাওয়া শুরু হলে করণীয় কি?
ফিড বন্ধ রাখুন। মৃত মাছ গুলো তুলে ফেলুন। ৫০% পানি পরিবর্তন করুন। প্রতিদিন FCO দিন। TDS পরিক্ষা করোন, Dissolved oxygen লেভেল ৪-৫ পিপিএম রাখার চেষ্টা করুন। প্রতিদিন C:N ratio হিসেবে মোলাসেস দিন।কোন ভাবেই অভিজ্ঞ কারও সাথে পরামর্শ ছাড়া antibiotic ব্যবহার করবেন না। করলে বিপদে পড়তে হবে।
👉 মাছের গ্রোথ এবং খাদ্য ব্যাবস্থাপনা :
সঠিকভাবে পরিচালনা করতে না পারলে যেমন মাছ বাঁচানো সম্ভব হয়না। তেমনিভাবে মাছের গ্রোথ ঠিকমত না হলেও বায়োফ্লকে লাভবান হওয়া যায় না। মাছের সুষম পুষ্টি নিশ্চিত করতে পারলে মাছের রোগ -বালাই কম হওয়া সহ দ্রুত দৈহিক বৃদ্ধি সংগঠিত হবে।উদাহরন স্বরুপ বলতে চাই, ভিটামিন সি ও বি মাছের খাদ্য গ্রহনে অনীহা দুর করে ও ত্বকের বিভিন্ন রোগ দুর করে।মাছের খাবারের তালিকায় থাকতে হবে সুষম খাদ্য উপাদান। প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেল এবং অ্যামিনো এসিড সমূহ নির্ধারিত পরিমাণ ও মাত্রায় নিয়মিত সরবরাহ করতে হবে।
বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন কোম্পানির গ্রোথ প্রমোটর মেডিসিন গুলো মূলত মাল্টিভিটামিন ও মাল্টিমিনারেল এবং অ্যামিনো এসিড এর সমন্বয়। যা পরিমিত মাত্রায় নির্দিষ্ট সময় পরপর বায়োফ্লক ট্যাংকে খাদ্যের পাশাপাশি প্রয়োগ করলে ২ মাসের মধ্যেই মাছের পুর্নাঙ্গ দৈহিক বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হবে। কাজেই ৪ মাসের মধ্যেই মাছ সফলভাবে হার্ভেস্ট করা যাবে।
👉 সর্বশেষ আয় ব্যায় :
একটি দশ হাজার লিটার ট্যাংকে আপনি যদি ভালো ভাবে পরিচর্যা করতে পারেন,তবে 400-500 কেজি পর্যন্ত উৎপাদন তুলতে পারবেন,কারো কারো 350-400 কেজিও হয়,আবার অনেকে 200-250 কেজি উৎপাদন করে হতাস ও হয়,পুরো ভিষয়টি নির্ভর করে আপনার অভিঙ্গতা, পরিশ্রম,আর সময় উপযোগি সিন্ধান্তে, তবে প্রথমে আশা কম করতে হবে।
তারপর সব কিছু ঠিক থাকলে আর আল্লাহ সহায় থাকলে পোনা কিনা+খাবার খরচ+অন্যান্য মিলিয়ে প্রতি দশ হাজার লিটার ট্যাংকের উৎপাদন বাবধ প্রায় 20 থেকে 25 হাজার টাকা খরচ হবে,আর মাছ বিক্রি করে পাবেন 35-40 হাজার টাকা,,
👉 সর্বশেষ একটা কথা :
না বুঝে করলে মাছ চাষ,লস খাবেন বারো মাস,কারো কথায় বা ট্রেইনারের মগজ ধোলাই করা কথা শুনে কেউ বায়োফ্লকে আসবেন না,আগে নিজের মধ্যে শক্তি আনুন,নিজেকে নিজে প্রশ্ন করোন,আপনার দ্বারা এই কাজ সম্ভব কিনা,যদি উত্তর প্রজেটিভ হয়,নিজের উপর নিজে বিশ্বাস রাখতে পারেন,তবেই আপনার জন্য বায়োফ্লক প্রজেক্ট।
আপনি লস খাবেন এটা আপনার একান্ত ব্যাক্তিগত ব্যাপার,কিন্তু আপনার লস দেখে আরো দশ জন উদ্যোক্তা হতাশ হবে,তাই কাজ শুরু করার আগে দশবার ভেবে নিন।
👉 বায়োফ্লক মাছ চাষ নিয়ে বিস্তারিত দেখুন ভিডিওতে : https://youtu.be/KEE3uE473v8
👉 লেখাটি আপনার কাছে হেল্পফুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেননা। ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর বিভিন্ন টিউটোরিয়াল ভিডিও পেতে এক্ষুনি সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেল লিংক :
✅http://www.youtube.com/c/ideaengineeringsolution
👉 কোন প্রশ্ন থাকলে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে :
✅https://www.facebook.com/groups/231597184166744/
👉 নতুন নতুন সব পোষ্ট পেতে লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ :
✅https://www.facebook.com/ideaengineeringsolutionbd
ধন্যবাদ ✌
কোন মন্তব্য নেই